কোন দেশের পাসপোর্ট কতটা শক্তিশালী এবং কিভাবে নির্ধারিত হয় ?
আজকে জানতে পারবেন কোন দেশের পাসপোর্ট কতটা শক্তিশালী এবং কিভাবে নির্ধারিত করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের পাসপোর্ট এর শক্তির দিক দিয়ে কত তম স্থানে রয়েছে পুরো বিস্তারিত আলোচনা করব
পাসপোর্ট একটি শুধু পরিচয় পত্র নয় আর ভ্রমণে একটি নথিপত্রে নয়। বরণ আপনি কোথায় যাচ্ছেন, কোথায় যেতে পারবেন না বা কোন দেশে গিয়ে আপনি কি ধরনের অভ্যর্থনা পাবেন কোন দেশে আপনার নিরাপত্তা কতটুকু সেটাও নির্ভর করে এই পাসপোর্ট এর উপর।
স্টিভেন ক্লিমজুক মতে : একটি পাসপোর্ট এর শক্তিমত্তা বা দুর্বলতা সেই পাসপোর্টধারী জীবনের মান কে প্রবাহিত করে। এমনকি অনেক সময় এটি জীবন মৃত্যুর কারণ দেখা দিতে পারে। (অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সাইদ বিজনেস স্কুলের ফেলো)
তাই আপনি কোন পাসপোর্ট বহন করছেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পাসপোর্ট শক্তিশালী না দুর্বল সেটি কিভাবে নির্ধারিত হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠায়, দেশ অনুযায়ী পাসপোর্ট এর সূচক তৈরি করে। এর মধ্যে অন্যতম লন্ডনভিত্তিক অভিবাসন কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান হেনলি এন্ড পাসপোর্ট সেট তৈরি হেনলি পাসপোর্ট ইন্ডেক্স এর সূচক অনুযায়ী জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট। আর সবচেয়ে দুর্বল পাসপোর্ট রয়েছে আফগানিস্তানে।
বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের আর্থিক বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া ক্যানাডা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের অলটন ক্যাপিটাল শক্তিশালী পাসপোর্ট বিষয়ে তাদের ইন্টেক্স তৈরি করেছে । অলটন ক্যাপিটাল কিছুটা ভিন্ন ধরনের তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। এই সূচকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট সংযুক্ত আরব আমিরাতে।আর সবচেয়ে দুর্বল পাসপোর্ট আফগানিস্তানে।
ভিসামুক্ত ভ্রমণ সুবিধা
কোন একটি পাসপোর্ট এর মাধ্যমে কতটি দেশ বা কতোটি অঞ্চলে কতটা সহজে ভ্রমণ করা যায় সেটি পাসপোর্ট এর তালিকা তৈরি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
হেনলি পাসপোর্ট ইন্ডেক্স বিশ্বের 199 টি দেশের পাসপোর্টকে তালিকাবদ্ধ করে। একটি দেশের পাসপোর্ট দিয়ে কতগুলো দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করা যায় তার সংখ্যার উপর ভিত্তি করে হেনলি পাসপোর্ট ইন্ডেক্স তৈরি করা হয়। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিবহন সংস্থা ইন্টার্নেশনাল এয়ার ট্রানস্পর্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে এই সূচক তৈরি করা হয়।
হেনলি পাসপোর্ট ইন্ডেক্স অনুযায়ী বিশ্বের প্রথম দশটি শক্তিশালী পাসপোর্ট গুলোর মধ্যে রয়েছে জাপান ,সিঙ্গাপুর ,সাউথ কোরিয়া ,জার্মানি ,স্পেন ,ফিনল্যান্ড ,ইতালি লুক্সেমবার্গ ,অস্ট্রেলিয়া ,ডেনমার্ক
এই দশটি দেশের সবচেয়ে এগিয়ে জাপান কারণ এই পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিশ্বের 193 টি দেশে গন্তব্যে আগে থেকেই ভিসা না নিয়ে ভ্রমণ করা যায় আর এই তালিকায় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান । মাত্র 27 টি দেশ এবং অঞ্চলে আগে থেকে ভিসা না নিয়ে ভ্রমন করতে পারে এই দেশের নাগরিকরা।
হেনলি পাসপোর্ট ইন্ডেক্স মতে বাংলাদেশ পাসপোর্ট এর অবস্থান 104 তম মোট 41 টি দেশ বা অঞ্চলের ভিসা মুক্ত ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশীদের।
মবিলিটি স্কোর বা ভ্রমণ সুবিধায় স্কোর
আয়টন ক্যাপিটাল বিশ্বের 193 টি দেশ 6 অঞ্চল এবং অন্যান্য বিশেষ অঞ্চলের পাসপোর্ট নিয়ে তাদের তাদের সূচক তৈরি করে । এই সূচক তৈরি তে তারা তিনটি পদ্ধতি অনুসরণ করে এগুলো হচ্ছে মবিলিটি স্কোর বা ভ্রমণের সুবিধা, অন এরাইভাল ভিসা এবং ভিসামুক্ত ভ্রমণের অনুপাত এবং জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে অবস্থান
এই সূচকের প্রতিটি পাসপোর্টর আলাদা একটি মবিলিটি স্কোর থাকে ঐ পাসপোর্টধারী কতটি দেশে ভিসামুক্ত ভ্রমণ করে। কতটি দেশে অন এরাইভাল ভিসা সুবিধা পায়, ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথোরাইজেশন বা সুবিধা কতটি দেশে রয়েছে সেটি পাসপোর্ট এর সক্ষমতা নির্ধারণের ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথোরাইজেশন সুবিধা রয়েছে কিনা সেগুলো বিবেচনা করা হয়।
অন আ্যরাইভাল ভিসা ও ভিসামুক্ত ভ্রমণের অনুপাত
কোন একটি পাসপোর্টের কতটি দেশের ভিসামুক্ত ভ্রমণ করা যায় এবং কতটি দেশে অন এ্যারাইভাল' ভিসা সুবিধা আছে এই দুই ধরনের সুযোগ এর পার্থক্য নির্ধারণ করে যে একটি দেশের পাসপোর্ট কতটা শক্তিশালী। যে পাসপোর্ট দিয়ে যত বেশি সংখ্যক দেশে অন এ্যারাইভাল' এর তুলনায় ভিসামুক্ত ভ্রমণ করা যায় সেই পাসপোর্ট অন্য পাসপোর্ট এর চেয়ে বেশি শক্তি।
জাতিসংঘের হিউম্যান ডেভলপমেন্ট ইন্ডেক্স বা মানব উন্নয়ন সূচক
আয়টন ক্যাপিটালের তৈরি পাসপোর্ট ইনডেক্স তৈরিতে যে বিষয়টি আমলে নেয়া হয় সেটি হচ্ছে জাতিসংঘের উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স এর তথ্য। বিশেষ করে যখন একের বেশি দেশ অন্যান্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে একই ধরনের স্কোর করে তখন তাদের তালিকাবদ্ধ করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের এই ইনডেক্সের তথ্য দিয়ে তুলনা করা হয়। জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন ইন্ডেক্সরে তথ্য দিয়ে বিদেশে ঐ দেশের ভাবমূর্তির বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায় বলে আয়টম ক্যাপিটাল জানায়। মানব উন্নয়নের এইনইন্ডেক্সর কোন একটি দেশের কিছু মুল বিষয় বিবেচনা নিয়ে তৈরি করা হয়। যেমন, জনগণের দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যকর জীবন, জ্ঞান, জীবন যাত্রার মান। এছাড়া আরো কিছু বিষয় বিবেচনায় নেয় জাতিসংঘ এগুলো হচ্ছে
- কোন একটি দেশের জনগণের আয়ু
- শিক্ষারহার
- গ্রামীণ জনগণের বিদ্যুৎ সংযোগের সুযোগ
- জিডিপি অনুযায়ী মাথাপিছু আয়
- আমদানি-রপ্তানি
- অভ্যন্তরীণ অপরাধ প্রবণতা
- দরিদ্রতা সূচক
- আয় বৈষম্য
- ইন্টারনেটে সুযোগ ইত্যাদি
এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কোন একটি দেশকে ০ থেকে একের মধ্যে স্কোর দেওয়া হয় যেখানে এক সবচেয়ে ভালো 0 সবচেয়ে খারাপ। উন্নত দেশগুলোর এই স্কোর থাকে ০.৮ বা তার উপরে এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ০.৬৩২ যা সূচক এর মধ্যস্থরে । পাসপোর্ট ইনডেক্সে শক্তিশালী পাসপোর্ট এর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৮৯ তম। এই অবস্থানে থাকা অন্য দেশগুলোর লিবিয়া এবং উত্তর কোরিয়া । অন্যদিকে পাসপোর্ট ইনডেক্সের শক্তিশালী পাসপোর্ট এর তালিকা প্রথম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। জাতিসংঘের মানউন্নয়ন সূচকে এই দেশের স্কোর ০.৮৯
যুদ্ধ
ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ দেশ দুটির পাসপোর্ট সক্ষমতা উপর প্রভাব ফেলেছে এই যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা । হেলদি অ্যান্ড partner's নামে লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বলছে অনেক দেশ রুশ নাগরিকদের আপাতত ভিসা দেয়া বন্ধ রেখেছে। অন্যদিকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনের জন্য তাদের ভিসা নীতিতে সংশোধন এনেছে আবার অনেকে বিশেষ শর্তাবলী বাদ দিয়েছে। ফলে ইউক্রেনের পাসপোর্ট এর ভ্রমণ সক্ষমতা বেড়ে গিয়েছে। হেলদি পাসপোর্ট ইন্ডেক্স এর তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালে ইউক্রেনে পাসপোর্ট একধাপ এগিয়ে ৩৪ তম স্থানে উঠে এসেছে । দেশটির নাগরিকরা 143 টি দেশে বা অঞ্চলে ভিসামুক্ত ভ্রমণ করতে পারবে । এ তালিকায় রাশিয়ায় ৪ ধাপ নিচে নেমে ৪৯ তম স্থানে রয়েছে। অর্থাৎ রুশ নাগরিকরা এখন ১১৭ টি দেশে ভিসামুক্ত ভ্রমণ করতে পারবে । দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরো আসছে এই চিত্র আরো আশঙ্কাজনক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
হেনলে পাসপোর্ট ইন্ডেক্স এর সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী একদম তলানিতে আফগানিস্তান রয়েছে দেশটির মাত্র 26 টি দেশে অগ্রিম ভিসা না নিয়ে ভ্রমণ করতে পারবে নাগরিকরা।
ইউরোপে এগিয়ে
হেনলে পাসপোর্ট ইন্ডেক্স অনুযায়ী সেরা 10 পাসপোর্ট এর তালিকায় দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জার্মানিতে ১৯০ টি দেশ এবং অঞ্চলে ভিসামুক্ত মাধ্যমিক ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে জার্মানি নাগরিকদের। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ফিনল্যান্ড ইতালি এবং স্পেন। এছাড়া অস্ট্রিয়া ডেনমার্ক নেদারল্যান্ডস এবং সুইডেন যৌথভাবে রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ফ্রান্স যুক্তরাজ্য পর্তুগাল ও আয়ারল্যান্ড। ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র তবে এই অবস্থা আরো রযেছে নিউজিল্যান্ড নরওয়ে এবং সুইজারল্যান্ড মত ইউরোপ দেশগুলো। বুঝাই যাচ্ছে শক্তিশালী পাসপোর্ট এর সূচকে ইউরোপীয় দেশগুলোর এ আধিপত্য রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ইউক্রেনে এবং রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে যেমন বিপুলসংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে ঠিক তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিপুল পরিমাণ মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। বিভিন্ন জরিপ বলছে যে আগামী 25 বছরের জলবায়ু পরিবর্তন হবে মানুষের এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার সবচেয়ে বড় কারন।
ধারণা করা হচ্ছে যে 2050 সাল নাগাদ ১০০০ হাজার কেটি ভ্রমণের চাহিদা তৈরি হবে বর্তমানে এই চাহিদা 400 কোটি। ভবিষ্যৎ কোন দেশের পাসপোর্ট এর সক্ষমতা নির্ধারণের এই বিষয়টি আমলে নেয়া হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ধরনের নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে চোখ রাখুন।
আশা করি কোন দেশের পাসপোর্ট কতটা শক্তিশালী এবং কিভাবে শক্তিশালী নির্ধারিত করা হয় পুরো বিষয়টি বুঝতে পেরেছ আর্টিকেলটির যদি পরে ভালো লাগে অবশ্যই ফেসবুকে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
এ ধরনের নিত্য নতুন তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজটি এখনি লাইক দিয়ে সাথে থাকুন নতুন নতুন আপডেট পেয়ে যাবেন