বাঁশের উপকারিতা । বাঁশ খেল কি কি উপকার হয়
বাঁশ বাংলাদেশের শব্দটি খুবই পরিচিত। আপনি কি জানেন বাঁশ দৈনদিন আমাদের কতটা উপকার করছে। বাঁশ অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যের দিক এবং পরিবেশ রক্ষায় কতটা উপকারিতা যদি বাঁশ সম্পর্কে আপনার কম ধারনা থেকে থাকে। তাহলে আজকের এই পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন বাঁশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
টমাস আলভা এডিসন যেই বৈদ্যুতিক বাতি সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেছিলেন সেখানে বঁশেকে ফিল্টার মেন্ট ব্যবহার করেছিলেন।
বাঁশের উপকারিতা
মূলত বাঁশ কোন গাছ নয় এটি এক ধরনের গাছ চিরসবুজ বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ নামে পরিচিত বিজ্ঞানীদের কাছে। নাতিশীতোষ্ণ ও গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে জন্মায়। বিশ্বজুড়ে ৩০০ প্রকার বা প্রজাতির বাঁশ রয়েছে। তারমধ্যে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে জানা গেছে বাংলাদেশের রয়েছে প্রজাতির বাঁশ। এর মধ্যে রয়েছে মুলি, তল্লা, আইক্কা এ ধরনের নানা প্রজাতির বাঁশ রয়েছে ।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গেছে বাঁশের বৈচিত্র এবং প্রজাতি দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৮ তম। প্রথম স্থানে রয়েছে চীন চিনা সভ্যতায় বাঁশকে শুভ শক্তির প্রতীক হিসেবে ধরা হয় তাই চিনা সংস্কৃতিতে সর্বোচ্চ ব্যবহার রয়েছে বাঁশ। তারা মনে করে বাঁশ অশুভ শক্তি প্রতিহত করতে সাহায্য করে।
প্রকৃতি ও পরিবেশ, প্রাণ রক্ষায় বাঁশের ভূমিকা অনেক। বিশেষ করে দুর্যোগ মোকাবেলা পাহাড় ধস, ভূমিক্ষয়, নদী ভাঙ্গন রোধ, এবং জীবন বৈচিত্র রক্ষায় বাঁশের গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবেনা।
ওয়ার্ল্ড ব্যাম্বু অর্গানাইজেশনে তথ্য মতে অন্যান্য গাছের তুলনায় বাঁশ অনেক বেশি অক্সিজেন উৎপাদন করতে সাহায্য করে এবং বেশি মাত্রায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যার ফলে বাতাস বিশুদ্ধ থাকে। বৈজ্ঞানিক মতে বলা হয়ে থাকে বাঁশঝাড়ের আশেপাশে তাপমাত্রা কে 4 ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ঠান্ডা করতে পারে। যার ফলে এটা অনেকটাই প্রাকৃতিক ইয়ার কন্ডিশন হিসেবে কাজ করে থাকে।
এছাড়া তীর রোদ থেকে লম্বা লম্বা বাঁশঝাড় ছাড়া দিয়ে থাকে। বাঁশ গাছের শেকড় ছড়ানো থাকায় এটি মাটি ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করে এবং মাটি ঢালকে শক্ত ও মজবুত করে যার ফলে পাহাড় ধস ঠেকানো যায় এবং ভারী ধাতু শোষণ করে মাটির ক্ষয়রোধ করে।বাঁশঝাড়ে বিভিন্ন বর্ণ প্রাণী আশ্রয় নিতে পারে যা মোট কথায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ঠেকাতে বাসে গুরুত্ব অপরিসীম।
বাঁশে নির্মাণ উপকারিতা
বাংলাদেশ বৎসরের শুকনো বাঁশ চাহিদা প্রায় 10 লাখ টন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় নির্মাণ কাজে। বাঁশের ব্যাপক চাহিদা থাকায় চাঁদপুর সিলেট ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্যিকভাবে আবাদ করা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের গ্রামে উন্নতমানের নির্মাণ কাজের জন্য এবং বাড়ি ঘর নির্মাণের জন্য বাঁশ বেশ টেকসই উপাদান। বিশেষ করে প্রয়োজন হয় কাঁচা বাড়ি খুটি,দেওয়াল ও ছাদ তৈরিতে খুঁটি হিসেবে বাঁশ ব্যবহার করা হয়। বাঁশপাতায় ঘরের ছাউনি হয়। পাহাড়ি এলাকায় বাঁশ দিয়ে তোলা হয় মাচার ঘর। গ্রামের লোকজন ছোট খাল পার হওয়ার জন্য বাঁশ দিয়ে তৈরি করে সেতু। এছাড়া বেড়া তুলতে বন্যার আশ্রয় জন্য মজবুত মাচা তৈরি করার জন্য বাঁশের ব্যাপক প্রয়োজন হয়।
রোজা রাখার স্বাস্থ্যের উপকারিতা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে
দুর্যোগ থেকে রক্ষার জন্য বাঁশ এর উপকারিতা
দুর্যোগপূর্ণ ঝড়-ঝাপটা থেকে বসতঘর কে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন হয় বাঁশ । তাই গ্রামে বসত বাড়ির পাশে দেখতে পারবেন বাঁশঝাড় রয়েছে। জাপানে প্রচুর বাঁশের ঘর দেখা যায় কারন এইসব ঘর ভূমিকম্প সহনীয়। ভূমিকম্পের সময় বাঁশঝাড়ে আশ্রয় নেয়া সবচাইতে নিরাপদ।
বস্ত্র ও কাগজ শিল্পে বাঁশ
সুতো এবং কাগজ তৈরিতে বাঁশের ব্যবহার অনেক আগে থেকেই। বর্তমানে বাঁশের তন্তু দিয়ে টুপি, স্কার্ফ,গ্লাভস, মৌজা, প্যান্ট ইত্যাদি তৈরি করা হয়। তাছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের কাগজ টয়লেট পেপার তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশ।
নিত্যপণ্য বাঁশের প্রয়োজন
বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য তৈরি করা হয় গ্রাম এলাকায় আসবাবপত্র, বাদ্যযন্ত্র, রান্নাঘরের বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করা হয় এই বাঁশ দিয়ে।যেমন ডালা, কুলো,ওরা,খাঁচা, আরো ইত্যাদি ইত্যাদি আসবার পত্র। বাঁশের তৈরি হস্তশিল্প পরিবেশবান্ধব যা বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি। এগুলো সাধারণত দামে সস্তা হয় আবার রপ্তানি করে আয়ের সুযোগ রয়েছে।
পেটের মেদ বা চর্বি কমাতে এই অভ্যাসগুলো পরিহার করুন ।
বাসের মধ্যে এন্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুন থাকায় এটি এখন সেম্পু ট্রিনা সহ নানা ধরনের প্রসাধনীতে ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশ। সেই সাথে পোকামাকড় প্রতিরোধ করার জন্য ওষুধের সাথে বাঁশ ব্যবহার করা হচ্ছে।
খাদ্য হিসেবে বাঁশ উপকারিতা
খাদ্য হিসেবে বাঁশ অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে পুষ্টি উপাদান এবং স্বাদের জন্য বাংলাদেশ পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের কাছে খাবার বাঁশ কোড়ল নামে পরিচিত। বাঁশের তৈরি স্যুপ, সালাত, তরকারি, চচ্চড়ি ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয়। সাধারণত বাসের অঙ্কুরোদগম ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি হবার পর যে কচি বাঁশ হয় সেটা রান্না করে খাওয়া হয়। বাঁশপাতা দুধ টাটকা রাখতে সাহায্য করে আবার এটি চা মধ্যে দিয়ে খাওয়া যায়। বিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা গেছে রান্না করা বাঁশ খাবারে থাকে ফাইবার, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম , ভিটামিন-ই, আয়রণ পাওয়া যায়। খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে এটি হার্টের জন্য খুবই ভালো।
ফাইবার থাকায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম করে এবং হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। বাঁশ রান্না করা খাদ্য খাওয়ার পর দীর্ঘ সময় খিদে লাগে না ফলে ওজন কমাতে সাহায্য করে। তবে বাঁশ কাঁচা বা বাসি খেলে পেট খারাপ হবে । বাঁশের করুল সূর্য আলো থেকে দূরে রেখে ঠান্ডা জায়গায় রেখে সংরক্ষণ করতে হয়। আবার বাসক পাতা উত্তম গরুর খাদ্য।
সুস্থ জীবনযাপনের জন্য ৭ টি অভ্যাস
বাঁশ এত উপকারী উদ্ভিদ হওয়ার শর্ত এর যত্ন নেওয়ার কোনো প্রয়োজন হয় না। এটি যেকোনো পরিবেশে টিকে থাকতে সক্ষম। শুষ্ক মৌসুমে মাঝেমাঝে একটু মাঝে মাঝে পানি দিলে চলে। বাঁশ খুব দ্রুত বড় হয় চারা রোপণের পর ৫ বছরেও মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বাগানে পরিণত হয় বাঁশ গাছ সাধারণত গুচ্ছ হিসেবে একসাথে জন্ম নেয়। একেকটি গুচ্ছে ১০ থেকে ৮০ টি বাঁশ পর্যন্ত থাকতে পারে। আর এসব গুচ্ছে কি বাঁশঝাড় বলে থাকে।
কিছু এমন প্রজাতির বাঁশ রয়েছে যেগুলো ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৩৬ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এর মানে প্রতি ৪০ মিনিটে ১ ইঞ্চি করে বড় হয় । তাই বাঁশ যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় সে জন্য নিয়মিত কেটে পরিষ্কার রাখতে হবে। দ্রুত বৃদ্ধি হওয়ার কারণে বাঁশ বিক্রি করে বেশ লাভবান হওয়া যায়। অনেকে আবার শখ করে বাড়ির ভিতরে বাতাস বিশুদ্ধ রাখতে বাঁশ লাগায়।