মহরমের ১০ তারিক তাৎপর্য ও শিক্ষা
আশুরার তাৎপর্য শিক্ষানীয় বিষয়
মহরম বা আশুরার তাৎপর্য ও শিক্ষা - আমরা যেমন বাংলা বছরের প্রথম মাস বৈশাখ মাস, বা ইংরেজি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারি, ঠিক তেমনই আরবি তে বছরের প্রথম মাস মহরম মাস।
আরবি বছরের প্রথম মাস হলো মহরম মাস এই মহরম মাসের দশ তারিখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। যাকে বলে আশুরা দিন
আশুরা কি
আশুরা একটি আরবি শব্দ। যার উচ্চারণ হলো আশারা এই শব্দের অর্থ হলো দশ (১০)। প্রতিবছর মহরম মাসের ১০ দিন আসে বলে একে আশুরা বলা হয়।
মহরমের ১০ তারিখের ইতিহাস
মরম মাসের 10 তারিখে পৃথিবীতে অনেক ধরনের অলৌকিক ঘটনা ঘটে পূর্বের ইতিহাস থেকে জানা যায়। পৃথিবীর সৃষ্টির শুরু থেকেই আরবি মাস বা মহরমের ১০ তারিখ ক্যালেন্ডারে প্রচলিত ছিল। আর এই মাসকে ক্যালেন্ডার বা গননা হিসেবে শুধু ছিল না।
এই মাস এবং দিন পৃথিবীর ইতিহাস অনেক কিছু হিসাব রাখে। যা সম্পূর্ণ একটি পোস্টে বর্ণনা করা সম্ভব নয়।
এই মহরমের 10 তারিখে পৃথিবীতে বিভিন্ন বছর বিভিন্ন নবী দের সময় অলৌকিক ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো।
আল্লাহ তা,আলা মহরমের ১০ তারিখে মুসা নবি এবং তার সঙ্গীদের নিয়ে লোহিত সাগর কাল্পনিক ভাবে পার হয় এবং ফেরাউনের সৈন্য দল সেই সাগরে ডুবে যায় এই দিনে। এই নিয়ে কোরআন কারীমে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে।
ফেরাউন সাগরে ডুব যাওয়ার কাহিনী
আল্লাহ তা,আলা হযরত মুসা নবী কে নির্দেশ দেন তুমি তোমার সম্প্রদায় সৈন্যদেরকে নিয়ে রাতে শহর থেকে বের হয়ে পড়ো।
তখন মুসা নবি তার দল সৈন্যদের নিয়ে রাতের লোহিত নদীর কাছে চলে আসে। যখন ফেরাউন ওই খবর শুনতে পায় মুসা নবী দলবল নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে ফেরাউন তার দলবল নিয়ে বের হয়ে যায়।
মুসা নবীর সঙ্গীরা যখন দেখল ফেরাউন তাদের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে তখন তারা মুসা নবীকে বলতে লাগলো, হে মুসা আমরা তো ধরা পড়ে গেলাম।
মুসা বলে কখনো সম্ভব নয়। আমার সঙ্গে আমার আল্লাহ তা,আলা রয়েছে। তিনি আমাকে সঠিক পথ দেখাবেন তোমরা ধৈর্য্য ধরো। ঠিক সে সময় আল্লাহ তা,আলা মুসা নবীর নিকট বাণী পাঠায় তোমার হাতে থাকা লাঠি দ্বারা সমুদ্রে আঘাত করো। মুসা নবী হাতের লাঠি দ্বারা আঘাত করার সাথে সাথে সমুদ্রের পানি দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেল এবং সমুদ্রের মাঝখান দিয়ে রাস্তা তৈরি হয়ে গেল। সে রাস্তা দিয়ে মুসা নবী এবং সঙ্গীদের নিয়ে পার হয়ে যায় লোহিত সমুদ্র।
মুসা নবীর পেছনে পেছনে ফেরাউনের লোহিত সাগর পার হতে শুরু করল । যখন মুসা নবী এবং তার সঙ্গী লোহিত নদী পার হয়ে গেছে ফেরাউন তখন কিছুটা পিছনে ছিল। তখন আল্লাহ তা'আলার নির্দেশে লোহিত সাগরের পানি মাঝখান দিয়ে রাস্তা হয়েছিল সে রাস্তা ধ্বংস হয়ে যায় এবং পানি আগের মত হয়ে যায়। সে সমুদ্রের মাঝখানে ফেরাউনের এবং ফেরাউনের সৈন্যদল লোহিত সাগরে ডুবে ধ্বংস হয়ে যায়।
যখন সমুদ্রের পানিতে ফেরাউন ডুবে যায় তখন ফেরাউন ঈমান আনার অঙ্গীকার করে আল্লাহর প্রতি। কিন্তু তখন আল্লাহতালা তার ঈমান গ্রহণযোগ্য করেননি।
মদিনা ইহুদিরা কেন রোজা রাখে
একটা সময় রাসুল সা. মদীনায় আসার পর দেখলে ইহুদিরা মহরমের 10 তারিখে রোজা রাখছে। তখন রাসূল সা. প্রশ্ন করেন এটা কোন দিন যে দিনের জন্য তোমরা রোজা রাখছো?
প্রশ্নের উত্তরের জবাব দেয় এই দিনে ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুসা নবী আ. পরিত্রাণ লাভ করে।
তখন রাসুল সা. বলেন তাহলে তো তোমাদের থেকে আমার এই দিনে দেশি মর্যাদা দেয়া উচিত কারন মুসা আমার ভাই। তোমরাতো মুসার কথা কিছুটা মানো আবার কিছু মানোনা।
ইহুদিরা বলে আমরা কি মান্য করি না, তখন রাসুল সা. বলে নবি মুসা যে বলেছিলো শেষ নবী আসার পর তার উপর ঈমান আনা ফরজ এবং আগের সব ধর্ম বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এরপর থেকে নবীজি মহরম মাসের রোজা রাখত।
মহরম মাসে কেনো রোজা রাখবেন
আমাদের মাঝে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে মহরম মাসে ১০ তারিখের আগে পরে মিলিয়ে কেনো ২ টি রোজা রাখি।
নবীজি রোজা রাখা শুরু করার পর এক সাহাবার বলেন হে আমাদের নবী আমরাতো ইহুদী-খ্রিস্টানদের অনুসরণ করি না। তারা 10 তারিখ রোজা রাখে আমরা দশ তারিখে রোজা রাখি। এটা কি কেমন যেন একি হয়ে গেল না।
নবীজি তখন বলেন সামনের বছর থেকে মহরম মাসের ৯ তারিখে রোজা রাখবো।
এর জন্য মহরম মাসের 10 তারিখে আগে-পরে মিলিয়ে দুটি রোজা রাখতে হয়। এ দুটি রোজা রাখা সুন্নত।
এছাড়া মহরম মাসে বিভিন্ন নবীদের সময় বিভিন্ন ধরনের কাল্পনিক ঘটনা ঘটে যেমন :
হযরত ইউসুফ সা. ১০ আশুরা মাছের পেট থেকে বের হয়।
হযরত ইব্রাহিম সা. এই দিনে আগুন থেকে রক্ষা পায়।
হযরত আদম স. ৩৫০ বছর পর এই ১০ মহরম ক্ষমা করে দেয় আল্লাহ তা,আল।
ভাই মুসলমান কাছে এই দিনটি খুবই একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনের উপলক্ষে মুসলমান ভাইয়েরা মসজিদে দোয়া ও মাফিলে আয়োজন করে।